১৮ মাসের কথা থাকলেও ৫৪ মাসেও শেষ হয়নি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ। ৫ বছর আগে শুরু হওয়া হলের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও শেষ না হওয়ায় বাড়ছে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের মার্চে এ হলটি নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হলে প্রকল্পটির কাজ পায় আবদুর রাজ্জাক জেবিসিএ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি শেষ করতে তাদের ১৮ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ৫৪ মাস অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের তিন তলার কাজ সম্পন্ন হলেও বাকি রয়েছে পেলেস্তরা, টাইলস, দরজা, চৌকাঠসহ বিভিন্ন কাজ। যে পরিমাণ শ্রমিক দরকার তার বিপরীতে হাতেগোনা কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে চলছে প্রকল্পটির কাজ।
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এবং অদক্ষ জনবল আর স্বল্প পরিমাণে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে না। কিন্তু এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতর কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। বরং বিভিন্ন মেয়াদে কয়েক ধাপ সময় বৃদ্ধি করেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দেখাতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এতে ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা থেকে মিলছে না মুক্তি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কাজ তদারকি করছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বিষয়গুলো স্বীকার করে বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারিনি। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের চারপাশে সীমানা প্রাচীর ছিল না, যা বাস্তবায়ন হতে সময় লাগছে। এছাড়াও জটিল নকশা এবং করোনার কারণে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর আগেও তিনি দুই-তিন মাসের ভেতর কাজ বুঝিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. আবু তাহের বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করলেও কাজের যথাযথ অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে একবার জরিমানাও করেছি। তবে এবার যেকোনো মূল্যে ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ আদায় করে নিবো। এজন্যই তাদেরকে নতুন কোনো কাজ দিচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, যদি তারা ডিসেম্বরের ভিতরে কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে রিটেন্ডার করে নতুন কাউকে কাজ দিয়ে কাজ শেষ করবো। প্রয়োজন হলে তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আড়াই হাজারের বেশি ছাত্রীর বিপরীতে আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ৩০৩ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশ ছাত্রীই আবাসন সংকটের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আবাসন সংকটের কারণে বেশিরভাগ ছাত্রীর বাধ্য হয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলে ছাত্রীদের থাকার জন্য রয়েছে মাত্র ১৮০ টি আসন। ১৮০টি আসনের বিপরীতে অবস্থান করছেন ৩০৩ জন ছাত্রী। নিচের তলার ৬টি রুমে ৮ জন করে এবং উপরের প্রতি তলার রুম প্রতি ৬ জন করে গাদাগাদি করে থাকছেন ছাত্রীরা। হলে অবস্থানরত এক ছাত্রী জানান, অধিকাংশ রুমেই ডাবলিং অর্থাৎ বিছানা ভাগাভাগি করে থাকতে হচ্ছে। এমনকি দুইটা রুমে ১২ জন করেও থাকছেন। যার ফলে প্রায়ই নানারকম অসুখের সম্মুখীন হতে হয় তাদের।
0 Comments